শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ, ১৪৩১
বিনোদন ডেস্ক।।
সত্যজিত রায়ের অপু আর ফেলুদা চরিত্রকে রুপালী পর্দায় অমর করে দেওয়া সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হারানোর এক বছর আজ। গত বছর ১৫ নভেম্বর কলকাতার বেলভিও হাসপাতালে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে বর্ণিল এক অধ্যায়ের।
সৌমিত্রের অভিনয়জীবনের ব্যাপ্তি প্রায় ছয় দশকের। দীর্ঘ ৬০ বছরের ক্যারিয়ারে তার অভিনীত ছবি প্রায় তিন শতাধিক। অসংখ্য চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন বললে অত্যুক্তি হবে না। তবে মানুষ তাকে সবচেয়ে বেশি মনে রেখেছে তার অভিনীত প্রথম চরিত্র অপুর সংসার-এর ‘অপু’কে দিয়েই।
শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গে তার ছিলো আত্মিক টান। সেই টান থেকেই কখনো অভিনেতা হয়ে, কখনো কবি-আবৃত্তিকার হয়ে এ দেশে আসতেন।
বাংলাদেশ নিয়ে তার বিশেষ দুর্বলতা ছিল। তার কারণ এখানেই তার পিতৃভিটা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। সেখানকার ‘কয়া’ নামের একটি গ্রামে বাস করতো সৌমিত্রের পরিবার। তার পিতামহের আমল থেকে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে চলে যান। এ যাত্রার উদ্দেশ্য ব্যবসা-বাণিজ্য।
সৌমিত্রের বাবা ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের উকিল। প্রতি সপ্তাহান্তে বাড়ি আসতেন। এ আসা যাওয়া অনেক ভোগান্তির ছিলো। তাই তিনি পরিবার নিয়ে কলকাতায় পাড়ি দেন। তারপর থেকে কলকাতারই বাসিন্দা সৌমিত্র।
বড়পর্দায় তার সর্বপ্রথম কাজ বিশ্ব বিখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ ছবিতে নাম ভূমিকায়, যা ১৯৫৯ সালে নির্মিত হয়। এর আগে রেডিওর ঘোষক ছিলেন সৌমিত্র এবং মঞ্চে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেন।
সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন শক্তিমান এই অভিনেতা। পরবর্তীকালে মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। সিনেমা ছাড়াও নাটক, যাত্রা ও টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। লিখেছেন নাটক-কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনাও করেছেন। আবৃত্তিকার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল।
ছয় দশকের বেশি সময় বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল সৌমিত্র। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে আছে- অপুর সংসার, ক্ষুধিত পাষাণ, দেবী, স্বরলিপি, তিনকন্যা, পুনশ্চ, অতল জলের আহ্বান, অভিযান, বর্ণালী, প্রতিনিধি, চারুলতা, আকাশকুসুম, মনিহার, হঠাৎ দেখা, অজানা শপথ, অরণ্যের দিনরাত্রি, বসন্ত বিলাপ, অশনি সংকেত, দত্তা, জয় বাবা ফেলুনাথ, দেবদাস, গণদেবতা ও হীরক রাজার দেশে।
তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, মাধবী মুখার্জি, তনুজাসহ অনেক কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে।
ভারত সরকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ২০০৪ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০১২ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার’ দিয়ে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও ২০১৭ সালে তিনি ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ‘লিজিওন অব অনার’ লাভ করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই বছরে তাকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কার প্রদান করে। তবে ২০১৩ সালে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সৌমিত্র।